১)ব্যবসা কাকে বলে? উহা কত প্রকার ও কি কি?
উত্তর:পণ্য-দ্রব্য ও সেবাকর্ম উৎপাদন, পণ্য-দ্রব্য ও সেবাকর্ম বিনিময় ও এর সহায়ক কাজের সমষ্টিকে ব্যবসায় বলে।
আধুনিক ব্যবসাকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে । যথাঃ
১)শিল্প (Industry)
২)বাণিজ্য (Commerce)
৩)প্রত্যক্ষ সেবা (Direct Services)
১)শিল্প (Industry):
উত্তর:কাঁচামাল বা প্রাথমিক দ্রব্যকে কারখানাভিত্তিক প্রস্তুত প্রনালীর মাধ্যমে মাধ্যমিক বা চুড়ান্ত দ্রব্যের রুপান্তরের প্রত্রিুয়াকে শিল্প বলা হয়।
অথবা
যে প্রক্রিয়ায় প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ , কাচামালে রূপদান এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে কাঁচামালকে মানুষের ব্যবহার – উপযােগী পণ্যে পরিণত করা হয় তাকে বলা হয় শিল্প ।
আকারের ভিত্তিতে শিল্প চার প্রকার। যথা:
ক)বৃহৎ শিল্প
খ)মাঝারী শিল্প
গ)ক্ষুদ্র শিল্প
ঘ)কুঠির শিল্প
(ক) বৃহৎ শিল্প : এই শিল্পে স্থায়ী সম্পদের মূল্য ১০ কোটি টাকার অধিক এবং ১০০ জনেরও অধিক শ্রমিক কাজ করে ।
খ)মাঝারী শিল্প : এই শিল্পে স্থায়ী সম্পদের মূল্য ১০ কোটি টাকার কম এবং ২৫ হতে ১০০ জন শ্রমিক কাজ করে ।
(গ) ক্ষুদ্র শিল্প : এই শিল্পে স্থায়ী সম্পদের মূল্য ১.৫০ কোটি টাকা এবং২৫ জনেরও কম শ্রমিক কাজ করে।
(ঘ) কুঠির শিল্প : এই শিল্পে বিদ্যুৎ ব্যবহার ছাড়াই শুধুমাত্র পরিবারের সদস্যগন ঘরে বসে উৎপাদন কাজে নিয়োজিত থাকে ।
শিল্পকে প্রধানত পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
যথা:
১)প্রজনন শিল্পে (Genetic Industry)
২)নিষ্কাশন শিল্প(Extractive Industry)
৩)নির্মাণ শিল্প(Construction Industry)
৪)উৎপাদন শিল্প (Manufacturing Industry)
৫)সেবা শিল্প( Service Industry)
১)প্রজনন শিল্পে (Genetic Industry):
প্রজনন শিল্পে উৎপাদিত সামগ্রী পুনরায় সৃষ্টি বা উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত হয় ।
যেমন-নার্সারি, হ্যাচারী ইত্যাদি ।
২)নিষ্কাশন শিল্প(Extractive Industry):
নিষ্কাশন শিল্পের মাধ্যমে ভূগর্ভ ,পানি বা বায়ু হতে প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ করা হয।
যেমন —খনিজ শিল্প।
৩)নির্মাণ শিল্প (Construction Industry):
নির্মাণ শিল্পের মাধ্যমে রাস্তাঘাট,সেতু ইত্যাদি নির্মাণ করা হয়।
৪)উৎপাদন শিল্প (Manufacturing Industry):
উৎপাদন শিল্পে শ্রম ও যন্ত্রের ব্যবহারের মাধ্যমে কাঁচামালকে প্রক্রিয়াজাত করে চূড়ান্ত পণ্যে রূপান্তর করা হয়। যেমন – বস্ত্র শিল্প ।
৫)সেবা শিল্প( Service Industry):
সেবা শিল্প বিভিন্ন প্রকার সেবা প্রদানের মাধ্যমে মানুষের জীবনযাত্রা সহজ ও আরামদায়ক করে । যেমন – বিদ্যুৎ ও গ্যাস উৎপাদন ও বিতরণ , ব্যাংকিং ও স্বাস্থ্য সেবা ইত্যাদি ।
২)বাণিজ্য (Commerce):
উঃ ব্যবসায় বা শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল উৎপাদকের নিকট পৌঁছানো কিংবা শিল্পে উৎপাদিত পণ্য বা সেবা সামগ্রী ভোক্তাদের নিকট পৌঁছানোর সকল কার্যাবলিকে বাণিজ্য বলে ৷
বাণিজ্য দুই ধরনের। যথা:
১)অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য
২)আন্তর্জাতিক বা বৈদেশিক বাণিজ্য
অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য:
যখন একই দেশের দুটি অঞ্চলের মধ্যে পণ্যের বিনিময় হয়,তখন তাকে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য বলে।
আন্তর্জাতিক বা বৈদেশিক বাণিজ্য:
যখন দুই বা ততোধিক দেশের মধ্যে পণ্যের বিনিময়হয়, তখন তাকে বলে বৈদেশিক বাণিজ্য।
৩)প্রত্যক্ষ সেবা (Direct Services):
অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে স্বাধীন পেশায় নিয়ােজিত ডাক্তার , উকিল , প্রকৌশলী প্রভৃতি পেশাজীবীরা বিভিন্ন রকম সেবাকর্ম অর্থের বিনিময়ে প্রদান করে থাকেন । এ সকল সেবাকর্ম বা বৃত্তি প্রত্যক্ষ সেবা হিসেবে পরিচিত । যেমন: ডাক্তারি ক্লিনিক , আইন চেম্বার , প্রকৌশলী ফার্ম, অডিট ফার্ম ইত্যাদি । প্রত্যক্ষ সেবা আধুনিক ব্যবসায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা ।
মালিকানার ভিত্তিতে ব্যবসায় সংগঠনগুলােকে নিম্নোক্তভাবে ভাগ করা যায় :
১ . একমালিকানা ব্যবসায়
২ . অংশীদারি ব্যবসায়
৩ . যৌথ মূলধনী ব্যবসায় বা কোম্পানি সংগঠন
৪ . সমবায় সমিতি
৫ . রাষ্ট্রীয় ব্যবসায়
যৌথ মূলধনী ব্যবসায় বা কোম্পানি সংগঠন :
যৌথ মূলধনী ব্যবসায়ের ধারণা ( Concept of Joint Stock Companies ):
একমালিকানা ব্যবসায়ের মাধ্যমে বিশ্বের বুকে ব্যবসায়ের যে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছিল কালক্রমে আর একমালিকানার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি । একমালিকানা ব্যবসায়ের বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা বিশেষ করে মূলধনের স্বল্পতা ও একক পরিচালনা ও ক্ষুদ্র আয়তনের জন্য অংশীদারি ব্যবসায়ের উৎপত্তি হয় । কিন্তু অংশীদারি ব্যবসায়ও মূলধনের সীমাবদ্ধতা , আইনগত সীমাবন্ধতা , স্থায়িত্বহীনতা ও অসীম দায়ের ভার থেকে মুক্ত হতে পারেনি । এক সময় মানুষের চাহিদা , প্রয়ােজনীয়তা ও ব্যবসায়ের আওতা আরও বৃদ্ধি পেতে থাকে । ফলশ্রুতিতে আইনের ভিত্তিতে সৃষ্টি হয় অধিক মূলধন ও বৃহদায়তনের যৌথ মূলধনী ব্যবসায় যা কোম্পানি সংগঠন নামেও পরিচিত । মূলত শিল্প বিপ্লবের কারণে উৎপাদন ব্যবস্থায় যে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয় তার সাথে সাথে ব্যবসায় সংগঠনের প্রকৃতি ও আওতায় ব্যাপক পরিবর্তন আসে । উৎপাদন , বণ্টন ব্যবস্থা পারিবারিক গন্ডি থেকে বেরিয়ে এসে কারখানাতে স্থান নেয় । ফলে জন্ম হয় অধিক মূলধন , সীমিত দায় , যৌথ ব্যবস্থাপনা এবং আইনগত সত্তা ও পৃথক অস্তিত্ব বিশিষ্ট যৌথ মূলধনী ব্যবসায় সংগঠনের । উল্লেখ্য , অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি ( ১৭৫০ – ১৮৫০ ) সময়ে ইউরােপের কৃষিতে , শিল্পকারখানায় , কয়লা উত্তোলনে ও পরিবহন ব্যবস্থায় যে প্রযুক্তিগত পরিবর্তন সাধিত হয় তাকে শিল্প বিপ্লব ( Industrial Revolution ) নামে অভিহিত করা হয় ।
যৌথ মূলধনী ব্যবসায় আইনের মাধ্যমে সৃষ্ট ও পরিচালিত হয় । সর্বপ্রথম কোম্পানি আইন পাস হয় ব্রিটেনে ১৮৪৪ সালে যা The Joint stock Company Act 1844 ‘ নামে পরিচিত ছিল । ব্রিটিশ শাসিত ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম কোম্পানি আইন পাস হয় ১৮৫০ সালে । ১৯১৩ সালে ভারতীয় কোম্পানি আইন আবার নতুন করে পাস হয় । স্বাধীন বাংলাদেশেও অনেক বছর যাবত ১৯১৩ সালের কোম্পানি আইন চালু ছিল । কোম্পানি আইনের ব্যাপক সংস্কার করে ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশে নতুন কোম্পানি আইন প্রবর্তন করা হয় । বর্তমানে বাংলাদেশের সকল কোম্পানি ব্যবসায় ১৯৯৪ সালের আইন অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে । ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইনে কোম্পানি বলতে ‘ অত্র আইনের অধীনে গঠিত ও নিবন্ধিত কোনাে কোম্পানি অথবা বিদ্যমান কোনাে কোম্পানিকে বুঝায় ‘ । মূলত কোম্পানি সংগঠন হলো আইন দ্বারা সৃষ্ট , পৃথক অস্তিত্বসম্পন্ন , কৃত্রিম ব্যক্তি সত্তার অধিকারী এবং সীমিত দায়ের এমন এক ধরনের প্রতিষ্ঠান যেখানে কতিপয় ব্যক্তি মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে যৌথভাবে মূলধন বিনিয়ােগ করে ।
যৌথ মূলধনী ব্যবসায়ের বৈশিষ্ট্য (Features of Joint Stock Company):
বর্তমানের বৃহদায়তন ব্যবসায় জগতে এ জাতীয় ব্যবসায়ের গুরুত্ব অধিক । এ জাতীয় ব্যবসায়ের এমন কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যা তাকে অন্যান্য ব্যবসায় সংগঠন থেকে আলাদা মর্যাদা দিয়েছে ।
নিচে কোম্পানি সংগঠনের বৈশিষ্ট্যগুলাে বিশ্লেষণ করা হলাে –
১)যৌথ মূলধনী কোম্পানি একটি আইনসৃষ্ট ব্যবসায় সংগঠন । দেশের প্রচলিত কোম্পানি আইনের আওতায় এ ব্যবসায় গঠিত হয় । আইনি প্রক্রিয়ার অধীনে হয় বলে এর গঠন বেশ জটিল ও আনুষ্ঠানিকতাপূর্ণ । আইন অনুযায়ী এর সদস্য সংখ্যা নির্ধারিত । প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ২ জন এবং সর্বোচ্চ ৫০ জন এবং পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন সদস্য ৭ জন এবং সর্বোচ্চ সংখ্যা শেয়ার সংখ্যা দ্বারা সীমাবদ্ধ ।
২)কোম্পানি ব্যবসায় একটি স্বেচ্ছামূলক প্রতিষ্ঠান । কোম্পানি ব্যবসায় করতে আগ্রহী কিছু সংখ্যক ব্যক্তি স্বেচ্ছায় সংঘবদ্ধ হয়ে কোম্পানি গঠন করে । তবে সদস্যদের কেউ ইচ্ছা করলে শেয়ার হস্তান্তরের মাধ্যমে সহজেই ব্যবসায় থেকে বিদায় নিতে পারে । আবার কেউ ইচ্ছা করলে শেয়ার ক্রয়ের মাধ্যমে এর সদস্য পদও লাভ করতে পারে ।
৩)আইনের দ্বারা সৃষ্ট বলে এ ব্যবসায়টি কৃত্রিম ব্যক্তি সত্তার অধিকারী । কৃত্রিম ব্যক্তি সত্তা বলতে বােঝায় , ব্যক্তি না হয়েও ব্যক্তির ন্যায় আইনগত মর্যাদা ও অধিকার অর্জন করা । কোম্পানি যে কোনাে স্বাধীন ব্যক্তির মতাে নিজ নামে অন্যের সাথে চুক্তি ও লেনদেন করতে পারে এবং প্রয়ােজনে মামলাও করতে পারে । আবার অন্য কোনাে পক্ষও কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে ।
৪)কোম্পানি ব্যবসায় যেহেতু আইনের মাধ্যমে সৃষ্ট তাই এর বিলুপ্তি ঘটাতে চাইলে তা করতে হবে আইনের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় এভাবে সে চিরন্তন অস্তিত্বের মর্যাদা লাভ করে । কোনাে শেয়ার হােল্ডারের মৃত্যু , দেউলিয়াত্ব বা শেয়ার হস্তান্তরের মাধ্যমে কোম্পানির বিলােপ সাধন হয় না ।
৫)কৃত্রিম ব্যক্তি হওয়ার কারণে কোম্পানিকে একটি সিল ব্যবহার করতে হয় । কোম্পানির সকল কাজে ও কাগজপত্রে এ সিলের ব্যবহার বাধ্যতামূলক।
৬)আইনগতভাবেই কোম্পানির মূলধনকে কতকগুলো সমান অক্ষের ক্ষুদ্র এককে ভাগ করা হয় । এরূপ প্রত্যেকটি একককে একটি করে শেয়ার বলে । শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে কোম্পানি মূলধন সংগ্রহ করে । এজন্য এগুলােকে শেয়ার মূলধন বলে । ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে যে কোনাে ব্যক্তি এবং যে কোনাে প্রতিষ্ঠান শেয়ার কিনে এর সদস্যপদ লাভ করতে পারে । সদস্য সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে এবং শেয়ার বিক্রি করে মূলধন সংগ্রহ করার সুযােগ থাকার কারণে কোম্পানি ব্যবসায়ে অধিক মূলধনের সমাবেশ ঘটে।
৭)কোম্পানি ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে কোম্পানির মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনা সম্পূর্ণ আলাদা । একমালিকানা বা অংশীদারি ব্যবসায়ের মতাে মালিকেরা সরাসরি ব্যবস্থাপনায় অংশগ্রহণ করে না । ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব থাকে বেতনভুক্ত অন্য একটি পক্ষের উপর । পরিচালক বা মালিকগণ নীতি নির্ধারণ কাজে অংশগ্রহণ করে থাকেন।
৮) কোম্পানি ব্যবসায়ের সদস্যগণের দায় সীমিত । একমালিকানা বা অংশীদারি ব্যবসায়ের মতাে অসীম নয় । সদস্যগণের দায় সাধারণত শেয়ার মূল্য ও প্রতিশ্রুতি দ্বারা সীমাবদ্ধ । শেয়ার মূল্য দ্বারা সীমাবদ্ধ বলতে বােঝায় একজন শেয়ার মালিক যে মূল্যমানের শেয়ার কেনে তিনি শুধু সে পরিমাণ অর্থের জন্য দায়ী । অর্থাৎ যদি কোনাে শেয়ার মালিক কোনাে কোম্পানির ১০০ টাকা মূল্যের ১০০ শেয়ার ক্রয় করেন তাহলে তার দায় শুধু ১০ , ০০০ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে । অন্যদিকে প্রতিশ্রুতি দ্বারা সীমাবদ্ধ কোম্পানিতে একজন শেয়ারমালিক যে পরিমাণ শেয়ার ক্রয়ের জন্য প্রতিশ্রুতি দেন সে পরিমাণ অর্থের দায়বদ্ধ থাকবেন ।
৯)কোম্পানি ব্যবসায়ের পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় গণতান্ত্রিক রীতি – নীতি ও মূল্যবােধ অনুসরণ করা হয় । শেয়ারমালিকগণ প্রত্যক্ষভাবে ভােট দিয়ে পরিচালনা পরিষদ নিয়ােগ করেন পরিষদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ব্যবসায় পরিচালিত হয় ।
যৌথ মূলধনী ব্যবসায় বা কোম্পানি সংগঠনের প্রকারভেদ (Classification of Join Stock Company):
বিশ্ব সমাজ ব্যবস্থায় আর্থ – সামাজিক দিকের বহুবিধ পরিবর্তন ও উন্নয়নের ছোঁয়া ব্যবসায় জগৎকে স্পর্শ করে । যার কারণে একমালিকানা ও অংশীদারি ব্যবসায়ের সীমাবদ্ধতাকে কাটিয়ে বৃহদায়তন ব্যবসায় হিসেবে যৌথ মূলধনী ব্যবসায়ের উৎপত্তি হয় । যৌথ মালিকানাধীন যত রকমের ব্যবসায় সংগঠন আছে তার মধ্যে কোম্পানি সংগঠন সবচেয়ে বেশি পরিচিত ।
বাংলাদেশের কোম্পানি সংগঠনগুলােকে প্রধানত দু ‘ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা-
ক)প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি ও
খ)পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি ।
ক) প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি
(Private Limited Company):
যে কোম্পানির সদস্য সংখ্যা সর্বনিম্ন ২ জন এবং সর্বোচ্চ ৫০ জনে সীমাবদ্ধ এবং যার শেয়ার অবাধে হস্তান্তরযােগ্য নয় তাকে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি বলে । বাংলাদেশে প্রচলিত ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইনে বলা হয়েছে , প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি বলতে এমন কোম্পানিকে বােঝায় যার সদস্য সংখ্যা ৫০ জনে সীমাবদ্ধ , সদস্যদের শেয়ার হস্তান্তর অধিকার সীমিত এবং শেয়ার ও ঋণপত্র ক্রয়ের জন্য জনগণের নিকট আমন্ত্রণ জানানাে নিষিদ্ধ ’ অর্থাৎ কোম্পানির সদস্যগণ শুধু নিজেরাই শেয়ার ক্রয় করতে পারেন । সদস্য সংখ্যা ও মূলধনের পরিমাণ সীমিত হওয়ার কারণে এ জাতীয় কোম্পানির আয়তন তুলনামূলকভাবে ক্ষুদ্র হয়ে থাকে । আইন অনুযায়ী এ কোম্পানির পরিচালকের সংখ্যা ন্যূনতম ২ হতে হবে । বাংলাদেশে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ।
খ)পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি
(Public Limited Company):
যে কোম্পানির সদস্য সংখ্যা সর্বনিম্ন ৭ জন ও সর্বোচ্চ সদস্য সংখ্যা কোম্পানির মারকলিপিতে উল্লিখিত শেয়ার সংখ্যা দ্বারা সীমাবদ্ধ এবং শেয়ার ও ঋণপত্র জনগণের নিকট বিক্রি করা যায় এবং শেয়ার অবাধে হস্তান্তরযােগ্য তাকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি বলে । পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি প্রয়ােজনে মারকলিপিতে সংশােধনী এনে শেয়ার সংখ্যা বাড়িয়ে সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারে । আইন অনুযায়ী এ কোম্পানির ন্যনতম ৩ জন পরিচালক থাকতে হবে ।
যৌথ মূলধনী ব্যবসায়ের গুরুত্ব (Importance of Joint Stock Company):
বর্তমান ব্যবসায় জগতে একমালিকানা ব্যবসায়ের মতাে যৌথ মালিকানার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি ব্যবসায়ও দেশে দেশে খুব জনপ্রিয় । তাছাড়া বৃহদায়তনের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিপুল সখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযােগ সৃষ্টির জন্য কোম্পানি সংগঠন সবচেয়ে বেশি উপযােগী । কর্মসংস্থানের সাথে সাথে শুধু বেকারত্বই দূর হয় না , জীবনযাত্রার মানেরও উন্নতি হয় এবং মাথাপিছু আয় বাড়ে । আবার একমালিকানা ও অংশীদারি ব্যবসায়ে ঝুঁকি এবং দায় অসীম হওয়ার কারণে বড় আকারের ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়ােগ সম্ভব হয় না যা সম্ভব হয় কোম্পানি সংগঠনে । তাছাড়া উন্নত প্রযুক্তি সমৃদ্ধ শিল্পকারখানা গড়ে তুলতে কোম্পানি সংগঠনই বেশি উপযুক্ত । কারণ এ ধরনের ব্যবসায় সংগঠন ও শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠার জন্য যে বিশাল পরিমাণ মূলধন ও অর্থের প্রয়ােজন হয় তা শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিগুলাে জনগণের নিকট থেকে সংগ্রহ করতে পারে । ফলে দেশের শিল্প উন্নয়ন বিকাশে সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি পায় । কোম্পানি সংগঠন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অজ্ঞানে ব্যবসায়ের প্রসার বৃদ্ধি পায় ও বিভিন্ন দেশের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কও সুদৃঢ় হয় । বর্তমানে বহুজাতিক বিভিন্ন কোম্পানি বিশ্বব্যাপী তাদের ব্যবসায় পরিচালনা করে । আমাদের দেশেও বাটা সু লিমিটেড , ইউনিলিভার ইত্যাদি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান কাজ করছে । এভাবে এক দেশের কোম্পানি অন্য দেশে শাখা খুলে কাজ করার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্পর্কও গড়ে উঠে । বাংলাদেশে বিগত দুই দশক যাবত অনেকগুলাে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যেগুলাে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে অবদান রাখছে।
কোম্পানির গঠন প্রক্রিয়া (Process of Formation of a Company):
বাংলাদেশে প্রচলিত ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইন অনুসারে কতকগুলাে ধারাবাহিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে কোম্পানি গঠন করতে হয় ।
কোম্পানি গঠন প্রক্রিয়াটি সাধারণত চারটি ধারাবাহিক পর্যায়ে সম্পন্ন হয় । সেগুলাে হলাে-
ক)উদ্যোগ গ্রহণ পর্যায়
খ)দলিলপত্র প্রণয়ন পর্যায়
গ)নিবন্ধনপত্র সংগ্রহ পর্যায
ঘ)কার্যারম্ভ পর্যায়
ক)উদ্যোগ গ্রহণ পর্যায়:
এ পর্যায়ে কোম্পানি গঠনে আগ্রহী ব্যক্তিগণ নিজেরা একত্রিত হয়ে কোম্পানির সম্ভাব্য নাম , কোম্পানির ধরন , মূলধনের পরিমাণ , মূলধন সংগ্রহের উপায় , কোম্পানির ঠিকানা ইত্যাদি বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন । উদ্যোক্তাগণ ব্যবসায় সংগঠনের সম্ভাব্য নাম স্থির করে নিবন্ধকের অফিস থেকে সে নামে ছাড়পত্র সংগ্রহ করার চেষ্টা করেন ।
খ)দলিলপত্র প্রণয়ন পর্যায়:
এ পর্যায়ে কোম্পানির পরিচালকগণ কোম্পানি ব্যবসায়ের দুটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল প্রণয়ন করেন । একটি হলাে মারকলিপি এবং অন্যটি হলাে পরিমেল নিয়মাবলি । মারকলিপিকে কোম্পানির মূল দলিল , সনদ বা সংবিধান বলা হয় । এতে কোম্পানির গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেমন কোম্পানির নাম , নিবন্ধিত কার্যালয়ের ঠিকানা , উদ্দেশ্য , মূলধনের পরিমাণ , শেয়ারমালিকদের দায় – দায়িত্ব , ন্যূনতম চাঁদা ইত্যাদি বিষয় লিপিবদ্ধ করা হয় । অন্যদিকে পরিমেল নিয়মাবলিতে কোম্পানির অভ্যন্তরীণ পরিচালনা সংক্রান্ত প্রয়ােজনীয় সকল বিষয় লিপিবদ্ধ করা হয় ।
গ)নিবন্ধনপত্র সংগ্রহ পর্যায:
এ পর্যায়ে কোম্পানি নিকন্ধনের জন্য নিবন্ধকের অফিস থেকে ফি দিয়ে আবেদনপত্র সগ্রহ করতে হয় । আবেদনপত্র যথাযথভাবে পূরণ করে নির্ধারিত ফি ও প্রয়ােজনীয় দলিলপত্র নিবন্ধকের নিকট জমা দিতে হয় । নিবন্ধক নির্ধারিত আবেদনপত্র , সকল দলিলপত্র ও ফি পাওয়ার পর যদি সকল বিষয়ে সন্তুষ্ট হন তবে নিধন বইতে কোম্পানির নাম তালিকাভুক্ত করেন এবং নিধনপত্র প্রদান করেন । এ পত্র পাওয়ার পর প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি কাজ শুরু করতে পারে তবে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিকে কাজ শুরু করার জন্য নিধকের নিকট থেকে কার্যারম্ভের অনুমতিপত্র সংগ্রহ করতে হয় ।
ঘ)কার্যারম্ভ পর্যায়:
পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিকে কার্যারম্ভের অনুমতিপত্র পাওয়ার জন্য ন্যূনতম চাঁদা (Minimum Subscription) সংগ্রহের ঘােষণাপত্র এবং জনসাধারণের নিকট শেয়ার বিক্রয়ের ঘােষণাপত্রসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দলিলপত্রসহ আবেদন করতে হয় । সব কাগজপত্র ঠিক থাকলে এবং নিকন্ধক সন্তুষ্ট হলে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিকে কার্যারম্ভের অনুমতিপত্র প্রদান করেন । এ পত্র পাওয়ার পরেই পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি ব্যবসায় শুরু করতে পারে।ব্যবসা
Recent Comments